কী করিয়া সাধিলে অসাধ্য ব্রত কহো বিবরিয়া। জানি যদি প্রিয়ে, শোধ দিব এ জীবন দিয়ে এই মোর পণ॥ তোমা লাগি যা করেছি কঠিন সে কাজ, আরো সুকঠিন আজ তোমারে সে কথা বলা। বালক কিশোর উত্তীয় তার নাম, ব্যর্থ প্রেমে মোর মত্ত অধীর; মোর অনুনয়ে তব চুরি-অপবাদ নিজ-‘পরে লয়ে সঁপেছে আপন প্রাণ।
নীরবে থাকিস সখী,ও তুই নীরবে থাকিস। তোর প্রেমেতে আছে যে কাঁটা তারে আপন বুকে বিঁধিয়ে রাখিস। দয়িতেরে দিয়েছিলি সুধা, আজিও তাহে মেটে নি ক্ষুধা– এখনি তাহে মিশাবি কি বিষ। যে জ্বলনে তুই মরিবি মরমে মরমে কেন তারে বাহিরে ডাকিস॥
কহো কহো মোরে প্রিয়ে, আমারে করেছ মুক্ত কী সম্পদ দিয়ে। অয়ি বিদেশিনী, তোমার কাছে আমি কত ঋণে ঋণী।
হৃদয় বসন্তবনে যে মাধুরী বিকাশিল সেই প্রেম সেই মালিকায় রূপ নিল, রূপ নিল। এই ফুলহারে প্রেয়সী তোমারে বরণ করি অক্ষয় মধুর সুধাময় হোক মিলনবিভাবরী। প্রেয়সী তোমায় প্রাণবেদিকায় প্রেমের পূজায় বরণ করি॥
কোন্ বাঁধনের গ্রন্থি বাঁধিল দুই অজানারে এ কী সংশয়েরি অন্ধকারে। দিশাহারা হাওয়ায় তরঙ্গদোলায় মিলনতরণীখানি ধায় রে কোন্ বিচ্ছেদের পারে॥
দাঁড়াও, কোথা চলো, তোমরা কে বলো বলো। আমরা আহিরিনী, সারা হল বিকিকিনি– দূর গাঁয়ে চলি ধেয়ে আমরা বিদেশী মেয়ে। ঘাটে বসে হোথা ও কে। সাথী মোদের ও যে নেয়ে– যেতে হবে দূর পারে, এনেছি তাই ডেকে তারে। নিয়ে যাবে তরী বেয়ে সাথী মোদের ও যে নেয়ে– ওগো প্রহরী,বাধা দিয়ো না, বাধা দিয়ো না, মিনতি করি, ওগো প্রহরী।
রাজভবনের সমাদর সম্মান ছেড়ে এল আমাদের সখী। দেরি কোরো না, দেরি কোরো না– কেমনে যাবি অজানা পথে অন্ধকারে দিক নিরখি। অচেনা প্রেমের চমক লেগে প্রণয়রাতে সে উঠেছে জেগে– ধ্রুবতারাকে পিছনে রেখে ধূমকেতুকে চলেছে লখি। কাল সকালে পুরোনো পথে আর কখনো ফিরিবে ও কি। দেরি কোরো না, দেরি কোরো না, দেরি কোরো না।
পুরি হতে পালিয়েছে যে পুরসুন্দরী কোথা তারে ধরি, কোথা তারে ধরি। রক্ষা রবে না, রক্ষা রবে না– এমন ক্ষতি রাজার সবে না, রক্ষা রবে না। বন হতে কেন গেল অশোকমঞ্জরী ফাল্গুনের অঙ্গন শূন্য করি। ওরে কে তুই ভুলালি, তারে কে তুই ভুলালি– ফিরিয়ে দে তারে মোদের বনের দুলালী, তারে কে তুই ভুলালি।
হায় হায় রে হায় পরবাসী, হায় গৃহছাড়া উদাসী। অন্ধ অদৃষ্টের আহ্বানে কোথা অজানা অকূলে চলেছিস ভাসি। শুনিতে কি পাস দূর আকাশে কোন্ বাতাসে সর্বনাশার বাঁশি। ওরে, নির্মম ব্যাধ যে গাঁথে মরণের ফাঁসি। রঙিন মেঘের তলে গোপন অশ্রুজলে বিধাতার দারুণ বিদ্রূপবজ্রে সঞ্চিত নীরব অট্টহাসি॥
প্রেমের জোয়ারে ভাসাবে দোঁহারে বাঁধন খুলে দাও, দাও দাও। ভুলিব ভাবনা পিছনে চাব না, পাল তুলে দাও, দাও দাও। প্রবল পবনে তরঙ্গ তুলিল– হৃদয় দুলিল, দুলিল দুলিল, পাগল হে নাবিক, ভুলাও দিগ্বিদিক, পাল তুলে দাও, দাও দাও॥