না না কাজ নাই, যেও না বাছা,– গভীরা রজনী, ঘোর ঘন গরজে, তুই যে এ অন্ধের নয়নতারা। আর কে আমার আছে! কেহ নাই, কেহ নাই– তুই শুধু রয়েছিস হৃদয় জুড়ায়ে– তোরেও কি হারাব বাছা রে, সে ত প্রাণে স’বে না!
জল এনে দে রে বাছা তৃষিত কাতরে। শুকায়েছে কণ্ঠ তালু, কথা নাহি সরে।
নেহার’ লো সহচরি, কানন আঁধার করি, ওই দেখ বিভাবরী আসিছে। দিগন্ত ছাইয়া শ্যাম মেঘরাশি থরে থরে ভাসিছে। আয়, সখি, এই বেলা মাধবী মালতী বেলা রাশি রাশি ফুটাইয়ে কানন করি আলা। ওই দেখ নলিনী উথলিত সরসে। অফুট-মুকুল-মুখী মৃদু মৃদু হাসিছে। আসিবে ঋষিকুমার কুসুমচয়নে, ফুটায়ে রাখিয়া দিব তারি তরে সযতনে। নিচু নিচু শাখাতে ফোটে যেন ফুলগুলি, কচি হাত বাড়াইয়ে পায় যেন কাছে!
ফুলে ফুলে ঢ’লে ঢ’লে বহে কিবা মৃদু বায়, তটিনী হিল্লোল তুলে কল্লোলে চলিয়া যায় পিক কিবা কুঞ্জে কুঞ্জে কুহূ কুহূ কুহূ গায়, কি জানি কিসেরি লাগি প্রাণ করে হায় হায়!
সমুখেতে বহিছে তটিনী, দুটি তারা আকাশে ফুটিয়া, বায়ু বহে পরিমল লুটিয়া। সাঁঝের অধর হতে ম্লান হাসি পড়িছে টুটিয়া। দিবস বিদায় চাহে, সরযূ বিলাপ গাহে, সায়াহ্নেরি রাঙা পায়ে, কেঁদে কেঁদে পড়িছে লুটিয়া! এস সবে এস সখি, মোরা হেথা ব’সে থাকি। আকাশের পানে চেয়ে জলদের খেলা দেখি! আঁখি-‘পরে তারাগুলি একে একে উঠিবে ফুটিয়া।
কাল সকালে উঠব মোরা যাব নদীর কূলে_ শিব গড়িয়ে করব পুজো, আনব কুসুম তুলে। মোরা ভোরের বেলা গাঁথব মালা , দুলব সে দোলায়। বাজিয়ে বাঁশি গান গাহিব বকুলের তলায়। না ভাই , কাল সকালে মায়ের কাছে নিয়ে যাব ধরে– মা বলেছে ঋষির সাজে সাজিয়ে দেবে তোরে। সন্ধ্যা হয়ে এল যে ভাই […]
ও দেখবি রে ভাই, আয় রে ছুটে, মোদের বকুল গাছে রাশি রাশি হাসির মত ফুল কত ফুটেছে। কত গাছের তলায় ছড়াছড়ি গড়াগড়ি যায়_ ও ভাই, সাবধানেতে আয় রে হেথা, দিস নে দ’লে পায়!
তুই আয় রে কাছে আয় , আমি তোরে সাজিয়ে দি– তোর হাতে মৃণাল – বালা , তোর কানে চাঁপার দুল , তোর মাথায় বেলের সিঁথি , তোর খোঁপায় বকুল ফুল।। ও ভাই, দেখে যা, কত ফুল তুলেছি!