১৯৩৯

তোমার প্রেমের বীর্যে

                        তোমার প্রেমের বীর্যে তোমার প্রবল প্রাণ সখীরে করিলে দান।       তব মরণের ডোরে             বাঁধিলে বাঁধিলে ওরে                   অসীম পাপে                         অনন্ত শাপে।             তোমার চরম অর্ঘ্য কিনিল সখীর লাগি নারকী প্রেমের স্বর্গ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৩৯

আমার জীবনপাত্র উচ্ছলিয়া

          আমার জীবনপাত্র উচ্ছলিয়া মাধুরী করেছ দান–       তুমি জান নাই, তুমি জান নাই, তুমি জান নাই তার মূল্যের পরিমাণ।             রজনীগন্ধা অগোচরে যেমন রজনী স্বপনে ভরে                   সৌরভে,       তুমি জান নাই, তুমি জান নাই, তুমি জান নাই, মরমে আমার ঢেলেছ তোমার গান।       বিদায় নেবার সময় এবার হল–             প্রসন্ন মুখ তোলো,                   মুখ তোলো, মুখ তোলো– মধুর মরণে পূর্ণ করিয়া সঁপিয়া যাব প্রাণ                                           চরণে।       যারে জান নাই, যারে জান নাই,             যারে জান নাই, তার    গোপন ব্যথার নীরব রাত্রি হোক আজি অবসান॥

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৩৯

এতদিন তুমি সখা

           এতদিন তুমি সখা, চাহ নি কিছু;       নীরবে ছিলে করি নয়ন নিচু। রাজ-অঙ্গুরী মম করিলাম দান,       তোমারে দিলাম মোর শেষ সম্মান। তব বীর-হাতে এই ভূষণের সাথে       আমার প্রণাম যাক তব পিছু পিছু।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৩৯

ন্যায় অন্যায় জানি নে

          ন্যায় অন্যায় জানি নে, জানি নে, জানি নে,       শুধু তোমারে জানি             ওগো সুন্দরী। চাও কি প্রেমের চরম মূল্য– দেব আনি,       দেব আনি ওগো সুন্দরী। প্রিয় যে তোমার, বাঁচাবে যারে,       নেবে মোর প্রাণঋণ– তাহারি সঙ্গে তোমারি বক্ষে       বাঁধা রব চিরদিন             মরণডোরে। কেমনে ছাড়িবে মোরে,       ওগো সুন্দরী॥

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৩৯

রাজার প্রহরী ওরা অন্যায় অপবাদে

            রাজার প্রহরী ওরা অন্যায় অপবাদে নিরীহের প্রাণ বধিবে ব’লে কারাগারে বাঁধে। ওগো শোনো, ওগো শোনো, ওগো শোনো,       আছ কি বীর কোনো, দেবে কি ওরে জড়িয়ে মরিতে       অবিচারের ফাঁদে             অন্যায় অপবাদে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৩৯

এ কী খেলা হে সুন্দরী

         এ কী খেলা হে সুন্দরী, কিসের এ কৌতুক।       দাও অপমান-দুখ– মোরে নিয়ে কেন, কেন এ কৌতুক।            নহে নহে, এ নহে কৌতুক।       মোর অঙ্গের স্বর্ণ-অলংকার       সঁপি দিয়া শৃঙ্খল তোমার       নিতে পারি নিজ দেহে। তব অপমানে মোর অন্তরাত্মা আজি অপমানে মানে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৩৯

চুরি হয়ে গেছে রাজকোষে

               চুরি হয়ে গেছে রাজকোষে, চোর চাই যে করেই হোক। হোক-না সে যেই-কোনো লোক, চোর চাই। নহিলে মোদের যাবে মান!            নির্দোষী বিদেশীর রাখো প্রাণ, দুই দিন মাগিনু সময়।         রাখিব তোমার অনুনয়;       দুই দিন কারাগারে রবে,       তার পর যা হয় তা হবে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৩৯

তোমাদের একি ভ্রান্তি

            তোমাদের এ কী ভ্রান্তি– কে ওই পুরুষ দেবকান্তি,             প্রহরী, মরি মরি। এমন করে কি ওকে বাঁধে। দেখে যে আমার প্রাণ কাঁদে।             বন্দী করেছ কোন্‌ দোষে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৩৯

সুন্দরের বন্ধন নিষ্ঠুরের হাতে

             সুন্দরের বন্ধন নিষ্ঠুরের হাতে             ঘুচাবে কে। নিঃসহায়ের অশ্রুবারি পীড়িতের চক্ষে             মুছাবে কে। আর্তের ক্রন্দনে হেরো ব্যথিত বসুন্ধরা, অন্যায়ের আক্রমণে বিষবাণে জর্জরা– প্রবলের উৎপীড়নে কে বাঁচাব দুর্বলেরে, অপমানিতেরে কার দয়া বক্ষে লবে ডেকে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৩৯

আহা মরি মরি

                  আহা মরি মরি, মহেন্দ্রনিন্দিতকান্তি উন্নতদর্শন       কারে বন্দী করে আনে       চোরের মতন কঠিন শৃঙ্খলে। শীঘ্র যা লো সহচরী, যা লো, যা লো– বল্‌ গে নগরপালে মোর নাম করি,       শ্যামা ডাকিতেছে তারে।       বন্দী সাথে লয়ে একবার আসে যেন আমার আলয়ে দয়া করি॥

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৩৯